প্ল্যান্ট ল্যাব হোম | প্রকল্প | জনবল | প্রকাশনা | যোগাযোগ |
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৬০ মিলিয়ন এবং ধারনা করা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যাটি দ্বিগুন হবে। মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলেরও কম ক্ষুদ্রায়াতনের এই দেশে বর্তমানে প্রতি বর্গ মাইলে বাস করে গড়ে প্রায় ২৪৯৭ জন। জনসংখ্যার এই বিপুল চাপে প্রতিনিয়তই কৃষি জমির পরিমান হ্রাস পাচ্ছে। খাদ্যে এবং অনান্য কৃষি পণ্যের বিশাল চাহিদা পূরণে প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে একর প্রতি ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যের এই বিশাল চাহিদা পূরন একটি কার্যকরী সমাধান।
কৃষিভিত্তিক আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উদ্ভিদ জীবপ্রযুক্তি একটি সম্ভাবনাময় খাত। মানুষের কল্যাণে পরিবেশ বান্ধব ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে এ বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানত টিস্যু কালচার ও প্ল্যান্ট জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এই দুই শাখার মাধ্যমে এই বিভাগ তাদের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে এখানে জীবপ্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অধিক উৎপাদনশীল, রোগ বালাই ও অন্যান্য পরিবেশগত প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু উদ্ভিদের জাত উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে কাজ করা হচ্ছে।
গবেষণা ক্ষেত্র
টিস্যু কালচার-ভিত্তিক মাইক্রোপ্রোপাগেশন
মাইক্রোপ্রোপাগেশন টিস্যু কালচার পদ্ধতির একটি প্রয়োগ যার মাধ্যমে কোনো ষ্টক উদ্ভিদ থেকে বিপুল পরিমান চারা স্বল্প সময়ে তৈরি করা যায়। মূলত উচ্চ বংশবৃদ্ধির হার, মাতৃ উদ্ভিদের সমগূণ সম্পন্ন ও রোগমুক্ত চারা উৎপাদন প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে শস্য, ফলজ ও বনজ উদ্ভিদের উচ্চমানের চারা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। স্বল্প সময়ে মাতৃ গাছের অবিকল গুনসম্পন্ন চারার বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনের জন্য টিস্যু কালচার প্রযুক্তি বর্তমানে উন্নত দেশগুলির পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এপ্রক্রিয়ায় মাতৃ উদ্ভিদের সামান্য একটু মেরিস্টেমেটিক টিস্যু ব্যবহার করে চারা তৈরী করা হয় বিধায় মাতৃ উদ্ভিদের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য চারায় বজায় থাকে অথচ কোন রোগ সংক্রমিত হয়না। প্রক্রিয়াটি মৌসুম-নিরপেক্ষ হওয়ায়, ল্যাবরেটরিতে বছর জুড়ে চারা তৈরী করা যায় । বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এই প্রযুক্তি প্রয়োগে চারাপ্রতি উৎপাদন খরচ হ্রাস বা ফলন বৃদ্ধি অথবা উভয় দিক থেকে আর্থিক লাভের সুযোগ থাকে। কাজেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিতে টিস্যু কালচার প্রযুক্তি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ উদ্ভিদের টিস্যু কালচার প্রযুক্তিটি এখনও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে কলা ও আলু এদু'টি শস্যে রোগমুক্ত চারা উৎপদনের জন্য মাইক্রোপ্রোপাগেশন পদ্ধতির সফল বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হয়েছে। এতে বিগত এক যুগে আমাদের দেশের আলুর ফলন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্ট্র্রবেরি, আখ, কলা, স্টিভিয়া, জারবেরা ফুল, অর্কিড, লিলিয়াম, ক্যাপসিকাম ও হর্স রেডিসের চারার বাণিজ্যিক সফলতা যাচাই করছে।
প্ল্যান্ট জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
উদ্ভিদ জীবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিক্ষেত্রে অধিক উৎপাদনশীল, কীট পতঙ্গ ও অন্যান্য পরিবেশগত প্রতিকূলতা প্রতিরোধী ফসলের জাত ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মত এমন উন্নয়নশীল দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব। উদ্ভিদ জীবপ্রযুক্তি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি উদ্ভিদ থেকে কাঙ্খিত জিন সংগ্রহ করে অন্য একটি উদ্ভিদে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে উদ্ভিদটির জেনেটিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন করা যায়। প্ল্যান্ট জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তিটির মাধ্যমে এক বা একাধিক কাঙ্খিত জিন সরাসরি ফসলি উদ্ভিদে প্রতিস্থাপন সম্ভব। সরাসরি জিন প্রতিস্থাপন ছাড়াও এই প্রযুক্তিটির মাধ্যমে উদ্ভিদের নিজস্ব যে জেনেটিক বৈশিষ্ট্য আছে তাতে পরিবর্তন করেও কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য আনয়ন করা সম্ভব।সারা বিশ্বে গত এক যুগে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদের আবাদ সামঞ্জস্যপূর্ণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে কীট পতঙ্গ প্রতিরোধী ট্রান্সজেনিক বেগুন কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হচ্ছে।
বিদ্যমান সুবিধাদি
প্ল্যান্ট ল্যাবে টিস্যু কালচার এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধাদি বিদ্যমান রয়েছে। এদের মধ্যে ল্যামিনার এয়ারফ্লো কেবিনেট, অটোক্লেভ, ইনভারটেড মাইক্রোস্কোপ, শেকিং ইনকিউবেটর, স্পেকটোফটোমিটার, ফ্রিজার (-২০°সে,-৪০°সে -৮০°সে), গ্রোথ কেবিনেট, থারমাল সাইক্লার, বিভিন্ন প্রকার জেল ইলেকট্রোফোরেসিস সিষ্টেম,রেফ্রিজারেটেড সেন্ট্রিফিউজ, আল্ট্রাসেন্টিফিউজ, স্বয়ংক্রিয় ও ম্যানুয়ালি চালিত গ্রীন হাউস, টিস্যু কালচার চেম্বার, এক্সপেরিমেন্টাল ফিল্ড প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।.