মাইক্রোবিয়াল ল্যাব হোম | প্রকল্প | জনবল | প্রকাশনা | যোগাযোগ |
প্রকৃতিতে অসংখ্য অনুজীব বিদ্যমান। এসব অনুজীব একদিকে যেমন নানা ধরনের রোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের ক্ষতি করতে পারে, অপরদিকে এসব অনুজীব ব্যবহার করে নানাবিধ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি প্রস্তুত করা হয়। পার্শ্ববর্তী দেশসহ উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ দেশে অনুজীব ব্যবহার করে খাদ্য দ্রব্য, বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক যেমন; ইনসুলিন, ভ্যাক্সিন, এনটিবায়োটিক এবং শিল্পে ব্যবহার্য নানাবিধ মূল্যবান দ্রব্যাদি প্রস্তুত করা হচ্ছে। উৎপাদিত এসব মূল্যবান দ্রব্যাদি আমরা আমদানি করে প্রতি নিয়ত ব্যবহার করছি। অনুজীবকে ব্যবহার করে প্রচলিত পদ্ধতিতে আমরাও কিছু দ্রব্য প্রস্তুত করে ব্যবহার করছি। অনুজীব ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় মূল্যবান দ্রব্যাদির উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজিতে মাইক্রোবিয়াল বায়োটেকনোলজি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
আমাদের দেশে চামড়া ও বস্ত্র প্রক্রিয়াজাতকরণে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করা হয়। পরিবেশবান্ধব এনজাইম ব্যবহার করা হলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ রোধ হবে অপরদিকে চামড়া ও বস্ত্রের গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে এবং বস্ত্র ও চামড়া বা চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানী মূল্য ও চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং সর্বোপরি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এ লক্ষ্যে বর্তমানে এ বিভাগে বস্ত্র ও চামড়া শিল্পে ব্যবহারের জন্য অনুজীব হতে পরিবেশবান্ধব এনজাইম উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম চলমান আছে।
প্রোবায়োটিক হল 'নন-প্যাথোজেনিক জীবন্ত অণুজীব'-এর একটি গ্রুপ যা উপযুক্ত পরিমাণে ব্যবহার করা হলে হোস্টকে স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে পারে। শিল্পে সর্বাধিক ব্যবহৃত প্রোবায়োটিকগুলি হল বিফিডোব্যাকটেরিয়াম এবং ল্যাকটোব্যাসিলাস বংশের সদস্য। এগুলো মিউসিনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে, অন্ত্রের ব্যাপ্তিযোগ্যতা হ্রাস করে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ মুক্ত করে, বা ইমিউন সিস্টেম পরিবর্তন করে প্রোবায়োটিক মানুষের অন্ত্রে প্যাথোজেন প্রবেশ করা বন্ধ করতে পারে। প্রোবায়োটিকের নিয়মিত সেবন হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমণ, শিশুর ডায়ারিয়া, প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ, ক্লোস্ট্রিডিয়াম ডিফিসিল কোলাইটিস এবং আরও অনেক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। দই, কেফির, কম্বুচা, স্যুরক্রট, আচার, মিসো, টেম্পেহ, কিমচি, টক রুটি এবং পনির হল সবচেয়ে জনপ্রিযয় গাঁজনযুক্ত খাবার যা প্রাকৃতিকভাবে প্রোবায়োটিক ধারণ করে বা এতে প্রোবায়োটিক যোগ করা হয়।
বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের শিশুদের জন্য ডায়রিয়া বহুল আলোচিত ব্যাধি। বর্তমানে রোটাভাইরাস দ্বারা সংক্রমনের ফলে ৮০-৮৫ ভাগ শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। রোটা ভাইরাস খাবার পানি, মল, ঝড় ও বৃষ্টির দূষিত পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্যমান রোটা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন সর্বক্ষেত্রে কার্যকর নয় এবং এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য নয়। এ বিচেনায় রোটা ভাইসের বিরুদ্ধে অধিক কার্যকারী ঔষধ ও ভ্যাক্সিন উদ্ভাবন জন্য গবেষণা কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়া হেপাটাইইটিস বি এর বিরুদ্ধে অধিক অধিক কার্যকারী ঔষধ ও ভ্যাক্সিন উদ্ভাবন লক্ষ্যে প্রাথমিক গবেষণা কার্যক্রম চলমান আছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী যে কোন দেশের উন্নয়ন চাবিকাঠি। আমাদের দেশে পানি, গ্যাস ও আমদানীকৃত ডিজেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়ে থাকে। সরকারের বিশেষ নজরদারীর কারণে বর্তমানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও পানি ও গ্যাসের উৎস সীমিত এবং ডিজেল আমদানী ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে দেশের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের দেশে ময়লা আবর্জনা ও নোংরা পানির অভাব নাই। এসব পরিতাজ্য দ্রব্য ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হলে একদিকে যেমন জ্বালানীর উপর চাপ কমবে অন্যদিকে পরিবেশ দুষণ হ্রাস পবে। এ উদ্দেশ্য সামনে রেখে আবর্জনা ও নোংরা পানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কৗশল উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্র চলমান আছে।